সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত আটক হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর গুলশান থেকে তাকে আটক করা হয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন তিনি। এরপর থেকে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ে কাজ শুরু করেন। চিত্রনায়ক ফারুক মারা গেলে ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আরাফাত। ২০২৩ সালের অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে হিরো আলমকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হন তিনি।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আরাফাত। এ নির্বাচনে ৪৮ হাজার ৫৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিকল্পধারা বাংলাদেশের আইনুল হক পান ১ হাজার ৩৮০ ভোট। গত ১১ জানিয়ারি নবগঠিত মন্ত্রী সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান।
সবশেষ গত ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর ১৫ আগস্ট ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। এতে তিনি লেখেন, এত লাশের ওপর দিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে চাননি বলেই তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু এত লাশের ওপর দিয়ে যারা ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল, তারা তো এখন ক্ষমতার অংশীদার, তাহলে তারা কেন আরও লাশ ফেলছে?’ শোকাবহ আগস্ট মাসে জাতির জীবনে যেন আরও শোক নেমে এসেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ওরা ভেবেছিল, আমাদের শেষ করে দিবে। তথাকথিত অভ্যুত্থানের আড়ালে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে এবং চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি করে, আমাদের একে একে হত্যা করতে চেয়েছিল ওরা।
পরিবেশ চরম ঘোলাটে করে, কোনো বাছবিচার ছাড়াই আমাদের হত্যা করার ষড়যন্ত্র চলছিল। এমন অস্থির সময়ে কৌশলগত কারণেই আমাদের অন্তরালে থাকতে হয়েছে। কিন্তু, আমরা মরিনি, আমরা আছি।
তিনি আরও লেখেন, আগস্টের ৫ তারিখে আমরা ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছি। সেই দিনই ঘাতকের দল ৪৫০টি থানায় আক্রমণ চালায় এবং নির্মমভাবে হত্যা করে ১৫ জন পুলিশ সদস্যকে। আহত করে আরো অগণিত পুলিশ সদস্যদের। আনসার ও বিজিবি সদস্যদের ওপরও হামলা চালানো হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জেনেছি (যদিও সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি) সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় অন্তঃসত্ত্বা একজন নারী পুলিশ সদস্যকেও হত্যা করা হয়।
৫ আগস্ট ১১৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তিনি লেখেন, শুধু ৫ আগস্টের দিনই ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, কর্মজীবী মানুষ, পথচারী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, পুলিশ সদস্য এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ১১৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। অনেক মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার পর প্রথম ৪৮ ঘণ্টায় নিহতের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে বলে অনুমান সাংবাদিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের। শিল্পী, সাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদদের আক্রমণ করা হয়েছে।
ফেনীর এক ছাত্রলীগ নেত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে তিনি লেখেন, ছাত্রলীগ নেত্রী ইসরাত চৌধুরী দোলাকে ফেনীর বাসা থেকে তিনদিন আগে একদল দুর্বৃত্ত অপহরণ করে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে– সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দোলার মতো দেখতে এমন একটি ছবিসহ তথ্য প্রচার হলে জেলাজুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার এমন মেয়েদের লাশ আজকাল পানিতে ভেসে আসতে দেখা যাচ্ছে। শত শত মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
কোটা আন্দোলনে সরকারের ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি লেখেন, কোটা আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই নিহত আবু সাইদসহ অন্যান্য হত্যাকাণ্ডকে আমরা নিন্দা জানিয়েছিলাম, দুঃখ প্রকাশ করেছিলাম, বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। আবু সাইদসহ অন্যান্য যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল, তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখা করেছিলেন, তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রতিটি হতাহতের ঘটনার তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনার ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছিল। আন্দোলনের সময় নিহত মীর মুগ্ধের বাসায় শিক্ষামন্ত্রী গিয়েছিল এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করেছিল।
কোটা আন্দোলনের সময় যতগুলো দুঃখজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তার মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং পুলিশ সদস্যরাও ছিল। কিন্তু ঢালাওভাবে সব মৃত্যুর দায় আমাদের সরকারের ওপর দেওয়া হয়েছে।
৩০ লাখ শহীদের ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতা জনগণই রক্ষা করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই আগস্ট মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যগুলো কারা ভেঙে ফেললো? ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে কারা আগুন দিলো? শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নয়, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ভাস্কর্যও ভাঙা হয়েছে। নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার প্রতিকৃতিতে নোংরা ভাষা ব্যবহার করে কালো রঙের দাগ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশ এখন আইন-শৃঙ্খলা বিহীন অবস্থায় আছে, সবকিছু চলে গেছে দুর্বৃত্তদের দখলে, যেখানে কেউই নিরাপদে নেই। ইনশাল্লাহ আমরা ছিলাম, আমরা আছি, আমরা থাকব। ৩০ লক্ষ শহীদের ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতা এ দেশের জনগণই রক্ষা করবে।
এসময় জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত সকল মৃত্যুর বিচার দাবি করে তিনি বলেন, জুলাই থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, প্রতিটি মৃত্যুর বিচার করতে হবে। প্রতিটি হত্যাকারীকে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করতে হবে। আমি এই সব হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই এবং সব দায়ী ব্যক্তির সাজা চাই।
কোটা আন্দোলনে সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, আবু সাঈদ এবং মীর মুগ্ধসহ সব শহীদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। এবং এই কোটা আন্দোলনে যে সকল প্রাণহানি হয়েছে সকলের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
মন্তব্য করুন