ভূমি পরিমাপের প্রাচীন পদ্ধতি শিকল যা আবিষ্কার করেন ফরাসি বিজ্ঞানী এডমন্ড গান্ট । এই শিকল দিয়ে ভূমি বা জমি পরিমাপ করা হতো। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে জমি পরিমাপের পদ্ধতিতেও পরিবর্তন এসেছে।
বর্তমানে টেপ বা ফিতা দিয়ে দৈঘ্য প্রস্থ পরিমাপ করে জমি পরিমাপ করা যায় সহজেই । ইন্টারনেটে ঘুরা ঘুরি করে জমি মাপার অনেক তথ্য পাবেন।
কিন্তু এত এত জমি মাপার পদ্ধির মাঝে সঠিক জমি মাপার পদ্ধতি বের করা কঠিন। তাই সহজ ভাবে জমি মাপার জন্য আজকের এই আর্টিকেল। মনোযোগ দিয়ে পড়ুন অবশ্যই কিছু শিখতে পারবেন ।
তার আগে জানতে হবে ক্ষেত্রফল বের করা , জানতে হবে গড় বের করা । অংকের বিশাল অংশ থেকে এই দুইটা বিষয় জানলেই আপনি নিজেই হতে পারেন আমীন।
আমীন না হলেও নিজের জমি পরিমাপের ক্ষেত্রে কেউ আপনাকে ঠকাতে পারবেনা । অনেক শিক্ষিত লোকও জমি পরিমাপের হিসাব সঠিক ভাবে বুঝে না । শিক্ষিত স্বল্পশিক্ষিত সকলের জন্যই জমি পরিমাপের সহ পদ্ধতি আজ আপনাদের জানাবো ।জমি পরমাপের বিভিন্ন একক রয়েছে যেমন বর্গফুট, বর্গলিংক, বর্গহাত, বর্গগজ , বর্গমিটার ইত্যাদি।
বিভিন্ন পদ্ধতির বিষয় আলোচানা করলে কোনটাই শিখা হবেনা । জমি পরিমাপের জন্য অধিকতর যেসব পদ্ধতি সহজ । বুঝতে কোন সমস্যা হবে তাই নিয়ে আলোচনা করবো।
আমরা আলোচনা করতে চাচ্ছি বর্গফুট নিয়ে । কেননা , এই বর্গফুট বা ফুটের মাপের বিষয় অনেকেই অবজ্ঞত থাকেন এবং দৈনন্দিন কাজে ফুটের ব্যবহার বেশি করা হয় ।
আমরা জানি, দৈর্ঘ্য x প্রস্থ = ক্ষেত্রফল। জমির দৈর্ঘ্য প্রস্থ জানা থাকলে অনায়েসে একর শতাংশ কাঠা ইত্যাদি একক বের করা যাবে ।
নিচের চিত্রের প্রতি খেয়াল করুন
চিত্রে দেখুন আমরা জমিকে তিন দিক থেকে তিনবার জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ মেপেছি। চিত্র অনুযায়ী জমির আইলকে একেকটা বাহু হিসবে পরিকল্পনা করবো আপাতত । যখন বুঝে যাবে তখন আর এই বিষয় কোন সমস্যা হবেনা।
যাই হোক, আমরা দেখতে পারছি ছবিতে তিনটা+তিনটা = ছয়টা বাহু আছে । আপনি যত খুশি তত বাহু নিতে পারেন । অনেক ক্ষেত্রে জমির আঁকাবাঁকা ক্ষেত্রে বেশি বেশি বাহু নেওয়ার প্রয়োজন পরতে পারে ।
আপনাদের বুঝার স্বার্থে তিনটা ,তিনটা ৬ টা বাহু নিয়ে জমি পরিমাপের বিষয়টা বুঝাতে চাচ্ছি । যখন বুঝে যাবেন তখন যত খুশি বহু নিয়েও জমি মাপতে পারবেন।
চিত্রে দেখছেন আমারা তিনটা তিনটা ছয়টা বাহু নিয়েছি । যার মধ্যে তিনটা বাহু দৈর্ঘ্য আর তিনটা বাহু প্রস্থ । এখন প্রশ্ন হচ্ছে তিনটা বাহু কেন নিয়েছে দৈঘ্য ও প্রস্থের ক্ষেত্রে ।
আগেই বলেছি জমি সব সময সব দিকে সমান থাকে না অনেক ক্ষেতে জমির আইল বা বাহু আঁকাবাঁকা , এক সাইট কম আরেক একসাইট বেশি থাকে । তাই জমির সঠিন মাপ নিরুপন করার জন্য যত খুশি তত বাহু নেওয়া যায় ।
এত বাহু দিয়ে কিভাবে জমি পরিমাপ করবেন।
এত বাহুর সমাহারের মাঝে দুইটা বাহু আপনাকে বের করতে হবে । একটি হলো দৈর্ঘ্য আরেকটি হলো প্রস্থ। এই দুইটা বাহুর পরিমান জানতে পারলেই আমারা জমি ক্ষেত্রফল বের করতে পারবো ।
কেন না আমরা জানি জমির দৈর্ঘ্য গুন প্রস্থ সমান ক্ষেত্রফল পাওয়া যায় ।
আপনারা জানেন, জমির ক্ষেত্রফলই হলো আপনার মূল জমি । এখন এই দু্ই টা বাহু বের করতে হলে আপনার জনতে হবে গড় অংক। গড় কিভাবে বের করবেন ।চিন্তার কিছু নাই যারা পারেন না তাদের জন্য অতি সহজেই বিষয়টা বুঝিয়ে দিবো ।
গড় অংক
চিত্রে দেখুন আমি দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বিভিন্ন পরিমান নির্ধারণ করে দিয়েছি ,যেমন , দৈর্ঘ্য- ১৪৩, ১৪৬,১৫৫ অথ্যাৎ এই গুলো হলো তিনটা বাহুর পরিমান । অন্যদিকে প্রস্থ- ৬৯,৬৫,৬৬ ।
আমারা যদি ১৪৩+১৪৬+১৫৫ যোগকরি তাহলে এর ফলাফল হবে ৪৪৪ । অন্য দিকে ৬৯+৬৫+৬৬ যোগ করি এর ফলাফল হবে ২০০ ।
অতএব আমরা পেয়েছি দৈর্ঘ্য ৪৪৪ আর প্রস্থ ২০০ । লক্ষ্যকরুন ৪৪৪ এ কিন্তু তিনটা বাহুর দৈর্ঘ্য আর ২০০ তে তিনটা বাহুর প্রস্থ। এখান থেকে একটা বাহুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বের করতে হবে। এই একটা বাহুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বের করত হবে গড় করে।
আমরা যদি ৪৪৪ কে তিন দিয়ে ভাগ করি তাহলে কিন্তু একটা বাহুর দৈর্ঘ্য বের হয়ে যাবে । অন্যদিকে ২০০ কে যদি তিন দিয়ে ভাগ করি তাহলে কিন্তু একটি বাহুর দৈর্ঘ্য বের হয়ে আসবে । এটাই হলো গড় ।
এখন হয়তো অনেকে বলবেন , তিন দিয়ে কেন ভাগ করলাম । তিন দিয়ে ভাগ করলাম এর জন্য যে , তিনটা বাহুর যোগ ফল ছিলো ৪৪৪ আর ২০০ । এখানে যদি চারটা বাহু দিযে যোগ করতাম তাহলে চার দিয়ে ভাগ করতাম । আশা করি বিষয়টা বুঝতে পারছেন।
৪৪৪ আর ২০০ কে তিন দিয়ে ভাগ করলে এর ফলাফল হয় যথাক্রমে ১৪৮ ও ৬৬.৬৭ । আপনার ক্যালকোলেটার হাতে নিয়ে এই যোগ ভাগ করে দেখতে পারেন।
তাহলে আমরা একটা বাহুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ১৪৮ ও ৬৬.৬৭ পেলাম।
এই ১৪৮ ও ৬৬.৬৭ কে গুন করলে যে ফলাফল হবে তা দিয়ে শতাংশের বর্গফুট দিয়ে ভাগ করলেই শতাংশ বের হয়ে আসবে ।
এখন জানা দরকার কত বর্গফুটে কত শতাংশ । আমারা জানি ৭২০ বর্গফুটে ১.৬৫ শতাংশ। সেই হিসবে ৪৩৫.৬০ বর্গফুটে ১ শতাংশ হয় ।
তাহলে আমারা আগে আমাদের জমির দুইটা আইল বা বাহুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ গুন করে নেই । ১৪৮ ও ৬৬.৬৭ গুন করলে হয় ৯৮৬৭ । এই ৯৮৬৭ কে ৪৩৫.৬০ দিয়ে ভাগ করলে ৯৮৬৭ বর্গফুটে কত শতাংশ জমি আছে তা বরে হয়ে আসবে।
তাহলে চলুন ভাগ করি , ৯৮৬৭ কে ৪৩৫.৬০ দিয়ে ভাগ করলে ২২.৬৫ হয় । অথ্যাৎ এই ২২.৬৫ হলো শতাংশ সূত্র মতে । অতএব আমরা জানলাম ৯৮৬৭ বর্গফুটের জমিতে ২২.৬৫ শতাংশ জমি আছে।
কাঠা পরিমান
বিভিন্ন জায়গায় কাঠার হিসাব বিভিন্ন রকম । অনেক জায়গায় ১.৬৫ শতাংশে এক কাঠা জমি ধরা হয় । আবার অনেক জায়গায় ৬.৫ শতাংশে ১ কাঠা ধরা হয় । আপনার স্ব স্ব এলাকার কাঠার হিসাব মিলিয়ে নিবেন । তবে শতাংশের মাপ সরকারি ভাবে এটাই ব্যবহার করা হয়।
ইবাংলানিউজ২৪ এ আরো পড়ুন>>
ইবাংলানিউজ২৪
মন্তব্য করুন