এ ট্রায়াল শেষে ফলাফল আশাপ্রদ হলে তারা মানবদেহে করোনার টিকা প্রয়োগ (হিউম্যান ট্রায়াল) করার কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।
শুক্রবার (১ অক্টোবর) দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনকে বঙ্গভ্যাক্সের সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে তিনি এ তথ্য দেন।
তিনি বলেন, বানরের ওপর ট্রায়াল গত আগস্ট মাস থেকে শুরু করেছি। সেটা চলতি মাসেই (অক্টোবর) শেষ হবে। এরপর সে রিপোর্ট বিএমআরসিতে জমা দেওয়া হবে। তাদের কাছ থেকে অনুমোদন পেলেই হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হবে।
এর আগে গত ১৬ জুন বিএমআরসি জানিয়েছিল, গ্লোব বায়োটেকের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন ‘বঙ্গভ্যাক্সে’র হিউম্যান ট্রায়ালের অনুমতি পাওয়া যাবে শর্ত সাপেক্ষে।
গ্লোব বায়োটেকের পক্ষ থেকে সরবরাহকৃত প্রটোকল পেপারে কিছু ত্রুটি থাকায় তা সংশোধন করার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। সংশোধন করার পর ‘বঙ্গভ্যাক্সের’ হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেওয়া হবে।
বিএমআরসি’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন সেদিন জানিয়েছিলেন, সরাসরি অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলা যাবে না। তবে শর্ত দেওয়া হয়েছে। ভুল-ত্রুটি ঠিক করলে আমরা অনুমতি দিয়ে দেবো। শর্ত পূরণ করলে অনুমোদন দেওয়া হবে।
বঙ্গভ্যাক্সে’র সবশেষ অবস্থা কী জানতে চাইলে ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পুরো বিষয়টি অ্যাপ্রুভ প্রটোকলের আওতায় করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজি অনুষদের আইআরবি (ইন্সটিটিউশনাল রিভিউ বোর্ড) কমিটি এই প্রটোকল অ্যাপ্রুভ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আইআরবি কমিটি এই প্রটোকল অ্যাপ্রুভ করেছেন।
সেই সঙ্গে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিভিউ কমিটি। অর্থাৎ, এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি রিভিউ কমিটির অনুমোদিত একটি প্রটোকলের আওতায় বানরের উপর ট্রায়ালটা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মানবদেহে কোনও টিকার ট্রায়ালের জন্য বিএমআরসি’র কমিটি যেমন নৈতিক অনুমোদন দেয়, তেমনিভাবে যখন কোনও প্রাণীর ওপর ট্রায়াল হয় তার জন্য অনুমোদন নিতে হয় আইআরবি কমিটি থেকে।
বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কমিটি রয়েছে।
চলমান বানরের ওপর ট্রায়াল শেষ হলে সেই রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে বিএমআরসিতে। তারা যদি মানবদেহে প্রয়োগের অনুমোদন দেয় তখন আগামী মাসে মানবদেহে প্রয়োগের ট্রায়ালের শুরু করতে পারবো, বলেন ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।
বানরের ট্রায়ালের কতোটা আশা করছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, এর আগে ইঁদুরের ওপর ট্রায়াল হয়েছিল। সেখানে যেমন রেজাল্ট আমরা পেয়েছিলাম, বানরেও অনুরূপ ফলাফল পেয়েছি।
“সেই সঙ্গে বানরের ট্রায়ালে আরও কিছু অতিরিক্ত স্টাডি করা হচ্ছে, জানিয়ে তিনি জানালেন সেটা গতকাল (৩০ সেপ্টেম্বর) শুরু করেছি। আগামী ১৪ দিনের ভেতরে এর ফলাফল পাওয়া সম্ভব হবে”।
বানরের ওপর চলা ট্রায়ালে প্রথম দেখা হয়েছে, টিকা প্রয়োগের ফলে সেফটি অর্থাৎ অসুস্থতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা হয়েছে।
সেখানে সবগুলো প্যারামিটার ঠিক ছিল। এরপর টিকা প্রয়োগের কারণে তার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কিনা-সেখানেও ইতিবাচক ফলাফল এসেছে, যেমনটা ছিল ইঁদুরের বেলাতে।
আর এখন সেটা হচ্ছে, বর্তমানে ডেল্টাভ্যারিয়েন্টেসহ যতগুলো ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে তার বিরুদ্ধে কার্যকর কিনা।
“এই টিকা সবগুলো ভ্যারিয়েন্টকে প্রতিরোধ করতে পারে কিনা-সেই ট্রায়ালই এখন চলছে”।
আর যেহেতু পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে, তাই সেই অ্যান্টিবডি ডেল্টাসহ অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টকেও প্রতিহত করতে পারবে বলে আমরা আশা করছি, যোগ করেন তিনি।
আর এরপর বিএমআরসি আর কোনও শর্ত দেবে না বলেও আশা করছেন তারা।
ড. মহিউদ্দিন বলেন, বিএমআরসির সব শর্ত মেনে এই টিকার কাজ এ পর্যন্ত এসেছে। তাই আর কোনও শর্ত থাকা উচিত না।
আর কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে তারা মানবদেহে ট্রায়ালের অনুমতি দেবে-এটা আমরা আশা করছি।
আর যেহেতু ডেল্টাভ্যারিয়েন্টসহ অনেকগুলো ভ্যারিয়েন্ট এসেছে, এই ভ্যারিয়েন্টের বিপরীতে একটি নতুন টিকা দরকার।
যেহেতু আমরা সে সুযোগ পাচ্ছি যে নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে আমাদের টিকা কাজ করছে কিনা, সেটা ট্রায়াল করার। সেখানে আমরা আশাবাদী।
গত ২৮ ডিসেম্বর গ্লোব বায়োটেককে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়।
শুরুর দিকে গ্লোবের এই টিকার নাম ব্যানকোভিড থাকলেও সেটি পরিবর্তন করে বঙ্গভ্যাক্স নাম রাখা হয়।
এর আগে গতবছরের ২ জুলাই প্রতিষ্ঠানটি দেশে প্রথম ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। সেদিন তারা জানায়, গত ৮ মার্চ তারা এই টিকা আবিষ্কারের কাজ শুরু করেন।
৫ অক্টোবর গ্লোব জানায়, তারা সফলভাবে প্রাণীদেহে তাদের ট্রায়াল সম্পন্ন করেছেন। এখন হিউম্যান ট্রায়ালে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
মন্তব্য করুন