গর্ভাবস্থায় ও সন্তান প্রসবের সময় দেশে নারীদের মৃত্যুর পেছনে অন্যতম কারণ হলো ডায়াবেটিস। বিশ্বের যেসব দেশে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার বেশি, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সরকারের হিসাব বলছে, দেশে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মধ্যে ডায়াবেটিসের হার ২৭ শতাংশের বেশি।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির ডায়াবেটিস ইন প্রেগনেন্সি টাস্কফোর্স আয়োজিত ‘ম্যানেজমেন্ট অব হাইপারগ্লাসিমিয়া’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আলোচকেরা এসব কথা বলেন। এতে হরমোন, ডায়াবেটিস এবং স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, নারীদের বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিস হচ্ছে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা জেসটেশনাল ডায়াবেটিস। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাঁদেরও সন্তানধারণের সময় সতর্ক থাকতে হবে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে মা ও শিশু দুজনেরই ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এ ছাড়া এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে মা ও সন্তানের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের ওপর। তাই ঝুঁকি প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সঠিক সময়ে ডায়াবেটিস নির্ণয় এবং এর নিয়ন্ত্রণ।
সেমিনারের প্রধান অতিথি জাতীয় অধ্যাপক চিকিৎসক শাহলা খাতুন বলেন, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসা না করতে পারলে নারী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম স্বাস্থ্যঝুঁকিমুক্ত হবে না। তিনি বলেন, পরিবেশ, খেলার জায়গার অভাব, কায়িক পরিশ্রম কম করা, ব্যায়াম না করাসহ বিভিন্ন কারণে পশ্চিমাদের তুলনায় বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের হার বেশি। অন্যদিকে মানুষের গড় আয়ু বাড়ার ফলে নারীদের প্রজননক্ষমতা বা সন্তান জন্মদানের বয়সও বাড়ছে। ফলে জটিলতা বাড়ছে।
সেমিনারের বিশেষ অতিথি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক চিকিৎসক রোবেদ আমিন বলেন, সরকার দরিদ্র ও দুস্থদের বিনা মূল্যে ইনসুলিন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীরা যাতে ইনসুলিন পান, তার জন্য চিকিৎসকদের মধ্যে সচেতনতা ও সমন্বয় প্রয়োজন।
সেমিনারে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাহনিয়া হক। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে ইনসুলিন না ওষুধ, কোনটা নিরাপদ, এ নিয়ে একটি বিতর্কে অংশ নেন চিকিৎসক আহমেদ সালাম মীর এবং চিকিৎসক নাজমা আক্তার। বিতর্কে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের প্রধান ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ দত্ত এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম। তবে বিষয়টি এখন পর্যন্ত অমীমাংসিত থাকায় দুই বিতার্কিককেই বিজয়ী ঘোষণা করেন বিচারকেরা।
অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, মায়ের রক্তে শর্করার আধিক্য সন্তানের জন্য বিষের মতো। গর্ভধারণের আগে থেকেই ডায়াবেটিস থাকলে এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলে তা নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে।
উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির ডায়াবেটিস ইন প্রেগন্যান্সি টাস্কফোর্সের সমন্বয়কারী চিকিৎসক তানজিনা হোসেন, সেমিনারে বিশেষজ্ঞ প্যানেলে ছিলেন এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠান এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের রি-প্রোডাকটিভ এন্ডোক্রাইনালজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ফাতেমা আখতার। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক এস এম আশরাফুজ্জামান। সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক শাহজাদা সেলিম ধন্যবাদ জানিয়ে সেমিনারের সমাপ্তি টানেন।
মন্তব্য করুন