জলাতঙ্ক মানুষের জন্য একটি মারাত্নক একটি মরণব্যাধি রোগ এই রোগ একবার হয়ে গেলে তার ভালো হয় না । একমাত্র মৃত্যুই রোগ মুক্তির ঔষধ । জলাতঙ্ক হলে মৃত্যু অবধারিত । তাই জলাতঙ্ক থেকে কিভাবে মুক্তি ও সুরক্ষা এবং সচেতন হতে পারেন তার উপর ভিত্তি করেই আজকের লেখা ।
জলাতঙ্ক কি
জলাতঙ্ক হলো প্রাণী দেহে থেকে মানুষের দেহে সংক্রমিত একটি জেনেটিক ভাইরাস জনিত রোগ । এই রোগ মানুষের মস্তিষ্ককে সংক্রমিত করে। বিশেষ করে স্তন্যপায়ী প্রাণিদের মস্তিষ্ককে আক্রমন করে।
একবার এই রোগে ধরে গেলে আর সারানো যায় না। জলাতঙ্ক প্রাণী ও মানুষের জন্য সর্বদাই একটি মারত্নক একটি রোগ। তবে জলাতঙ্ক যেমন মারাত্নক তেমনি রোগি শতভাগ সুস্থ করা সম্ভব।
WHO পরিসংখ্যান
ওয়াল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) জলাতঙ্ককে মারত্নক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই রোগে প্রতিদিন ১৬০ জন মানুষ আক্রান্ত হয় এবং প্রতি ৯ মিনিটে একজন মানুষকে হত্যা করা হয় এই রোগের ফলে। পৃথিবীতে ১৫০ টির বেশি দেশে এই রোগের প্রভাব লক্ষ করা হয় ।
জলাতঙ্ক কিভাবে জড়ায়
জলাতঙ্কে আক্রান্ত প্রাণির মুখের লালার সাথে এই ভাইরাসের যোগাযোগ থাকে। প্রাণী থেকে মানুষের মাঝে এই রোগ সংক্রমিত হয় । সাধারনত কোন প্রাণীর কামড় , আচড় বা আক্রান্ত প্রাণীর লালা ক্ষত স্থানের লাগলে এই রোগ হয় । দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়ায় কুকুর এই ভাইরসের সবচেয়ে উল্লেখ যোগ্য বাহন । জলাতঙ্ক কুকুর দ্বার আক্রান্ত হয় শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ। অন্যদিকে পূর্ব ইউরোগের জলাতঙ্কের প্রধান বাহন হচ্ছে র্যাকন কুকুর এবং শিয়াল । উত্তর আমেরিকার স্কানস এবং বাদুর , দক্ষিণ কোরিয়াতে রেকন কুকুরের দ্বার মানুষ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয় ।
পোষা প্রাণী থেকেও এই মারাত্নক ভাইরাসের বিস্তার ঘটতে পারে। সুস্থ প্রাণীর সাথে সংক্রমিত প্রানির থেকে এই ভাইরাস জড়ায় ।
জলাতঙ্কের লক্ষণ
মানুষের দেহে জলাতঙ্ক হলে প্রাথমিক ভাবে জ্বর ,মাথা ব্যাথা, উত্তেজিতভাব, এবং আচড় বা কামড়ের অংশে চুলকানি , ক্ষতস্থান না শোকানো ।
এই আক্রান্ত রোগি আলো , পানিকে ভয় পায় । তাপমাত্রা পরিবর্তনের পাশাপাশি খিচুনি , আচরণ পরিবর্তন হতে পারে ।
জলাতঙ্কের চিকিৎসা
কুকুর , বানর, বিড়াল , শিয়াল, বাদুর , বেজী ইত্যাদি প্রাণীর সংস্পর্শে আসার পর যদি আপনার জলাতঙ্গ রোগের সন্দেহ হয় । প্রথমিকভাবে সচেতন হলে জলাতঙ্ক থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । তবে টিকা নেওয়াটাই সব চেয়ে ভালো চিন্তা।
জলাতঙ্ক বহনকারী প্রাণির কামড় বা আচড়ের স্থানে পানি ঢালতে হবে ১৫ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে , আক্রান্ত স্থানে খার যুক্ত সাবান তথা কাপড় কাচার সাবান অথব ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানিতে আক্রান্ত স্থান ডুবিয়ে রাখতে হবে কম পক্ষে ২০ মিনিট । অ্যালকহল ইথানল দিতে পারেন আক্রন্ত স্থানে।
এরপর একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন এবং প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা নিবেন ।
জলাতঙ্ক কি প্রতিরোধ করা যায়
অবশ্যই জলাতঙ্ক প্রতিরো করা যায় ১০০% । বন্য প্রাণী কুকুর বিড়ালকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে জলাতঙ্ক হ্রাস করা যায় । আপনার বাড়ীর পোষা প্রানীকে অবশ্য জলাতঙ্কের টিকা দিয়ে নিবেন অথবা আপনিও সচেতন হোন যাতে উক্ত প্রানী কোন কামড় বা আচর না লাগে।
আর যদি পোষা প্রাণি বা অন্য কোন সন্দেহজনক প্রাণী দ্বারা কামড় , বা আচড়ে আক্রান্ত হন , তাহলে দ্রুত সম্ভব প্রাথমিক চিকিৎসা শেষ করে টিকা দেওযা উচিত । একবার টিকা নিলে ৫ বছর পর্যন্ত আপনি নিশ্চিত জলাতঙ্ক থেকে । তবে ৫ বছরে এর মাঝে আাবার আক্রান্ত হলে হলে দুটি ডোজ নিতে হবে । ৫ বছর শেষ হলে যদি আবারও আক্রান্ত হোন । তাহলে অবশ্যই পুনরায় সম্পূর্ন ডোজ নিতে হবে ।
জলাতঙ্কের ডোজ ৪ টি । সরকারি হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা নিবেন যখন অবশ্যই ৪ টি ডোজ সম্পূর্ন করবেন ।
প্রথম ডোজ শুরু হবে যেদিন টিকা নিবেন । এর পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে ৩ দিন পর । তৃতীয় ডোজ নিতে হবে ৭ দিন পর এবং ৪র্থ ডোজ নিতে হবে ১৫ দিন পর । তবে মনে রাখবেন জলাতঙ্কের টিকা সম্পূর্ন ফ্রিতে দেওয়া হয় ।
সারা বাংলাদেশের বিভন্ন সরকারি হসপিটালে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয় । এ ক্ষেত্রে আজকে ময়মনসিংহে কোথায় জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয় তা জানিয়ে দিচ্ছি । ইচ্ছে করলে বাংলাদেশের যে কোন জায়গা থেকে টিকা নিতে পারেন । তবে স্ব স্ব জেলা শহরের হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয় ।
ময়মনসিংহে এসকে হসপিটালে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয় । প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত টিকা নিতে পারবেন । Sk Hospital, Mymensingh Medical College, Mymensingh
- জলাতঙ্ক-কুকরে-বিড়ালে-কমাড়-আচর
মন্তব্য করুন