নিউজ ডেস্ক: সাবেক সোভিয়াত ইউনিয়ন থেকে ১৯৯১ সালে স্বাধীন হওয়া ইউক্রেনের এক পাশে রাশিয়া, অন্য পাশে ইউরোপী ইউনিয়ন।
এই দুই পক্ষই চায় ইউক্রেনে প্রভাব রাখতে। বলাই বাহুল্য ইউক্রেনের রাজনীতেও এই দুই পক্ষের প্রভাব রয়েছে। এক অংশ পশ্চিমা ইউরোপীয় ও ন্যাটোর সাথে মিশতে আগ্রহী অন্য পক্ষ রুশ বলয়ের সাথে মিশতে আগ্রহী।
এই টানা-পুরোন অনেক আগে থেকেই থাকলেও ২০১৪ সালকে এখানে সবচেয়ে গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। কেননা সেই সময় ক্রাইনিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া। ইউক্রেনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি (২০১৯-বর্তমান) এবং তার আগে পেত্রো পোরোংশেকো (২০১৪-২০১৯)ইউরোপী ইউনিয়ন ও ন্যাটো পন্থি নেতা।
অন্যদিকে ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ছিলেন রাশিয়া পন্থী । এই ভিক্টোর ইয়ানুকোভিচকে ২০১৪ সালেও প্রেসিডেন্ট পদে ঘোষনা করা হয়েছিলো ।
কিন্তু নির্বাচন নিয়ে স্বচ্ছ ও প্রতিবাদের মুখে পুনরায় নির্বাচন হয় , যেখানে ইউরোপ পন্থী ভিক্টর ইউশেংকো (২০০৫-২০১৪) তার শাসন ব্যবস্থা ইউরোপ ও ন্যাটোর দিকে ঝোকতে থাকে ইউক্রেন।
২০১০ সালের গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ভিক্টোর ইয়ানুকোভিচ। কমে দামে গ্যাসের বিনিময়ে ক্রাইনিয়ায় রাশিয়ার নৌ বাহিনীকে জায়গা করে দেওয়া।
প্রেসিডেন্টের অপসারন বিষয় সংবিধান পরিবর্তন, ও দূর্নীতিতে অশোন্তোষ সৃষ্টি হয়। ইমেজ রক্ষার করনে ইউরোপী ইউনিয়নের সাথে বিশাল বানিজ্য চুক্তি করতে চাইলে রাশিয়া তা ভালো চোখে দেখেতে পারেনি।
২০১৩ সালে নভেম্বরে রাশিয়ার চাপে ইউরোপী ইউনিয়নের সাথে বানিজ্য চুক্তি থেকে বাহির হয়ে আসায় বিশাল গণ অন্তোষ সৃষ্টি হয় ইউক্রেনে। একপর্যায় ২০১৪ সালে ক্ষমতাচূত হয়ে পালিয়ে যান ভিক্টর ইউনুকোভিচ।
ঐ দিকে রুশ অধ্যুষিত অঞ্চল দক্ষিনে ক্রাইনিয়া ও পূর্ব দিকে ডনবাসে ব্যাপক বিক্ষুপ শুরু হয় । সেখানে সশস্ত্র বাহিনীকে সমর্থ দেয় রাশিয়া এবং কোটকৌশলে ক্রাইমেনিয়াও দখল নেয় তারা।
সে থেকেই পূর্বঞ্চল ঘিরে সংকট চলতে থাকে যার চূরান্ত রূপ এখনকার যু্দ্ধ পরিস্থিতি । সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক রাষ্ট্রই ন্যাটোর সদেস্য হয়েছে । যেমন- রাশিয়ার প্রতিবেশী এস্তোনিয়া, লাটভিয়া,লিথুয়ানিয়া।
সোভিয়ত ইউনিয়নের আক্রমন ঠেকাতে গঠন হয় ন্যাটো (NATO) বা North Atlantic Treaty Organisation । ইউক্রেন ন্যাটোর সদেস্য না হলেও ভবিষ্যতে সদেস্য হতে পারে এমন সংশয় ছিলো পুতিনের। যার ফলে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার প্রভাব কমে পারে এবং রাশিয়াকে একদিক থেকে ঘিরে ফেলতে পারে পশ্চিমা শক্তি।
তাই পুতিন কোন ভাবেই চান নি ন্যাটোর দিকে ইউক্রেন অগ্রসর হোক। ডনবাস কেন গুরুত্বপূর্নঃ রাশিয়ার ক্রাইমেনিয়া দখলের দুটো বিষয় ছিলো এক: উষ্ণ পানিতে ঘেরা ক্রাইমেনিয়ার বন্দর কৌশল গত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ন। দুই: ২০০ বছর থেকে রাশিয়ার অংশ থাকা ক্রাইমেনিয়া ৬০ শতাংশ মানুষ জাতিগত ভাবে রোশ। একই ভাবে দনেৎস্ক ও লুহান্সক নিয়ে গঠিত হওয়া ডনবাসের একটি বড় অংশও রোশ ভাষাভাষির ।
অনদিকে ডনবাস শিল্প অঞ্চল হিসেবেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। দনেৎস্ক ও লুহান্সক এই দুই জায়গাতে আছে কয়লার খনি।
ইউক্রেনের ইস্পাত তৈরিতে প্রধান হলো এই দনেৎস্ক । ২০১৪ সাল থেকে এই ডনবাসে সংঘাত শুরু হয় ইউক্রেন ও রোশ সমর্থিত একটি গোস্টির।
সেই বছর জুন মাসে একটি অঞ্চল দখল নেয় রোশ বিদ্রহীরা এবং তারা স্বাধীনতার ঘোষনাও দেয়। একই বছর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় পেত্রো পোরোংশেকো । নির্বাচনে অনেকটা বিচ্ছিন্ন ছিলো পূর্বাঞ্চল। সরকারি সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘাত চলতেই থাকে। যার ফলে মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজারের ও বেশি বেসামরিক মানুষের।
২০১৫ সালে মিনন্স চুক্তির মধ্যে যুদ্ধ বিরতির সুযোগ হলেও এই ডনবাসের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে দ্বন্দ্ব টিকে ছিলো এবং যুদ্ধ বিরতি না করার কৌশল ছিলো রাশিয়া- ইউক্রেনের। রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহিদের অস্ত্র দেওয়ার অভিযোগ ছিলো।
আর রাশিয়ার অভিযোগ ছিলো এই অঞ্চলের রোশ জনগোষ্টিকে শেষ করে দিতে চায় ইউক্রেন। দনেৎস্ক ও লুহান্সক পুরো অংশ বিদ্রোহীদের দখলে ছিলো না।
কিন্তু দুটি অংশ কে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মিস্টার পুতিনে স্বীকৃতি পর শান্তি রাক্ষার নাম করে সেখানে সেনা পাঠান পুতিন। মুলত নিজেদের কৃর্তত্ববাদী শাসনের মূল থেকে রাশিয়া -ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু বলে অনেকে মনে করছেন।
আরো পড়ুন>>
চাপের মুখে একখণ্ড ভূমিও ছাড় দেবে না ইউক্রেন, জেলেনস্কির কঠিন হুশিয়ারি।
মন্তব্য করুন