রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ৮১ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গুলশানে নিজ বাসভবন ‘ফিরোজা’য় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল থেকে রওনা হয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি বাসায় পৌঁছান।
এদিকে খালেদা জিয়ার বাসায় ফেরার খবরে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা হাসপাতাল প্রাঙ্গণ এবং গুলশানের বাসার সামনে বিকেল থেকেই ভিড় করেন।
গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। সেখানে তার ‘পরিপাকতন্ত্রে’ রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসের কথা জানান মেডিকেল বোর্ড।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য প্রফেসর ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী সংবাদ সম্মেলনে জানান, করোনার বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতেই বিএনপি চেয়ারপারসন হাসপাতাল থেকে বাসায় যাচ্ছেন। তবে এভারকেয়ারে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানেই বাসায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলবে।
তিনি বলেন, আমরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি, আপাতদৃষ্টিতে মেজর রক্তক্ষরণের চান্স সম্ভবত থামানো গেছে। তারপর সিসিইউতে রেখে আরও ছয়দিন পর্যবেক্ষণ করি। তখনও দেখেছি, উনার আর রক্তক্ষরণ হচ্ছে না। এরপর আমরা উনাকে শিফট করে কেবিনে নিয়ে আসি।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজা নিয়ে কারাগারে যেতে হয় খালেদা জিয়াকে। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তার সাজা হয়। করোনা মহামারি, স্বাস্থ্যগত অবস্থা ও বয়স বিবেচনায় ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে শর্তসাপেক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তি দেয় সরকার। এরপর কয়েক দফা এ মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।
গত বছরের মাঝামাঝি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দুই দফা খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে যেতে হয়। ৭৬ বছর বয়সী এ সাবেক প্রধানমন্ত্রী অনেক বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
গত বছরের ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। ২৭ এপ্রিল তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩ মে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে কেবিন থেকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে তার করোনামুক্তির খবর দেওয়া হয় ৯ মে। ৩ জুন চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে কেবিনে ফিরিয়ে আনা হয়। এর ১৬ দিন পর, সব মিলিয়ে তখন প্রায় পৌনে দুই মাস হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিয়ে ১৯ জুন বাসায় ফেরেন তিনি। এর মধ্যে করোনার দুই ডোজ টিকাও নেন।
এরপর গত বছরের ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৫ অক্টোবর তার ছোট একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর হয় বায়োপসি পরীক্ষা। সেবার প্রায় এক মাসের মতো রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে গত ৭ নভেম্বর ছাড়পত্র নিয়ে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ ফেরেন খালেদা জিয়া।
এর পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসায় বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে বিদেশে পাঠাতে সরকারের কাছে বারবার আর্জি জানানো হলেও অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তির শর্তের বিষয়টি উল্লেখ করে সরকার কোনোবারই সে আবেদনে সাড়া দেয়নি।
মন্তব্য করুন