বার্ধক্যজনিত কারণে যারা অভাবগ্রস্ত হবেন, সেসব অভাবগ্রস্তদের জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হবে। এই সাহায্য লাভের অধিকার রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। বার্ধক্যজনিত কারণে সেসব অভাবগ্রস্ত নাগরিক পেনশন পাবেন। পেনশনের এই ব্যবস্থাটি সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে। আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এটি চালু হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
উল্লেখ্য সংবিধানের ১৫(ঘ) অনুচ্ছেদে বলা আছে, সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতাপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়াতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারী সাহায্যলাভের অধিকার।
এর আগে গত ১৮ই ফেব্রুয়ারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে গণভবনে অর্থ বিভাগ কর্তৃক ‘সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তন’ বিষয়ক একটি উপস্থাপনা অবলোকন করে সরকারি-বেসরকারিসহ সকল ধরনের অনানুষ্ঠানিক খাতের ষাটোর্ধ্ব জনগণের জন্য একটি সার্বজনীন পেনশন স্কিম প্রণয়ন এবং কর্তৃপক্ষ স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন৷’’
আগামী ৬ মাস থেকে এক বছরের মধ্যেই ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্যও একই সুযোগ রাখা হচ্ছে।’- বলে জানান অর্থ মন্ত্রী।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের আয়ুষ্কাল ৭৩ বছর। ২০৫০ সালে সেটা হবে ৮০ বছর। ২০৭৫ সালের প্রাক্কালনে দেখানো হয়েছে— আমাদের আয়ুষ্কাল হবে ৮৫ বছর। এতে দেখা যায়, আগামী তিন দশকে মানুষ অবসর গ্রহণের পর আরও ২০ বছর তার আয়ু থাকবে। সে সময়ে তার আয় থাকবে না, কিন্তু তিনি বেঁচে থাকবেন। তাই তাদের দেখভালের জন্য কারও না কারও দায়িত্ব নিতে হবে। সরকার সে দায়িত্বটা নেবে।’
একজন গ্রাহক কত টাকা দেবেন এবং তার বিনিময়ে সরকার কত টাকা দেবে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কত টাকা পাবেন, সেটা পেনশন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। সবাই এতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। যারা অংশগ্রহণ করবেন, তারা যতটুকু দেবেন সরকার ততটুকুই দেবে। এটা বাস্তবায়ন করলে আশপাশের দেশগুলো যেভাবে চালায়, আমরা তাদের অনুসরণ করেই চালাবো।’
মন্ত্রী জানান, জমাকারীর অবর্তমানে এককালীন টাকা তোলার কোনও সুযোগ থাকবে না। তবে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পেনশনের ৫০ ভাগ ঋণ হিসেবে উত্তোলন করা যাবে। কোনও জমাকারী ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার পর যদি মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে জমাকৃত অর্থ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা পরে আলোচনা করে নির্ধারণ করা হবে। পেনশন কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য ব্যয় সরকার নির্বাহ করবে। কর্তৃপক্ষ বাজেটে নির্ধারিত টাকা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যয় করবেন। এভাবেই আমরা প্রস্তাবনা ঠিক করেছি। আরও প্রস্তাবনা আসবে এবং সেটা বিবেচিত হবে। এটা বাস্তবায়ন করা গেলে সবাই লাভবান হবে। শেষ বয়সে যখন কেউ দেখার থাকবে না, তখন এ পেনশন ব্যবস্থা কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও এ ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারবেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়টি আমরা পড়ে বিবেচনা করবো। জাতীয় পরিচয়পত্রের ওপর ভিত্তি করে দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত সব নাগরিক পেনশন হিসাব খুলতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে এ পদ্ধতি ঐচ্ছিক থাকবে, পরে বাধ্যতামূলক করা হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘পাইলট না, সবার মতামত নিয়ে বিধিমালা, আইন একসঙ্গেই প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা হবে। এরপর যদি প্রয়োজন হয়, বাস্তবায়ন চলাকালীন সময়ে সেটা তখন দেখা যাবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে মাসিক পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হবে। প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি পেনশন অ্যাকাউন্ট থাকবে। ফলে চাকরি পরিবর্তন করলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে। মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদা নির্ধারিত থাকবে। তবে প্রবাসীরা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দিতে পারবেন। চাঁদা জমা দিতে ব্যর্থ হলে হিসাব সাময়িক বন্ধ থাকবে। পরবর্তীতে জরিমানাসহ বকেয়া দিয়ে হিসাব চালু করতে পারবেন। পেনশনের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা ৬০ বছরপূর্তিতে নির্ধারিত হারে তহবিল থেকে আসবে। পেনশনধারীরা মৃত্যুর আগে পর্যন্ত পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। নির্ধারিত চাঁদা দানকারী ৭৫ বছর হওয়ার আগে মৃত্যুবরণ করলে জমাকারীর নমিনি পেনশন পাবেন। সেক্ষেত্রে নমিনি ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশন পাবেন।’
- ১৮ থেকে ৫০ বছরের কম নাগরিক পেনশনের আওতায় থাকবে
- অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকের থাকবে আলাদা অ্যাকাউন্ট
- ধারাবাহিকভাবে ১০ বছর মাসিক চাঁদা দিলে পেনশন পাওয়ার যােগ্যতা অর্জন করবে।
- প্রবাসীরা বৈয়মাসিক ভিত্তিক চাঁদা দিতে পারবেন
- ৬০ বছরের পর থেকে মাসিক হারে পেনশন পাওয়া যাবে
৭৫ বছর বয়স ধারমিনি এই সুবিধা পাবেন;
কৃতজ্ঞতাঃ বাংলা ট্রিবিউন, dw, সময় টিভি
মন্তব্য করুন