ফাটা কপাল হলে যা হয়। কাউকে সাপাের্ট করলে তারও কপাল ফেটে যায়। যে কারণে টিভিতে খেলা দেখি না। যে দলকে সাপাের্ট করি সে দলই হেরে যায়। ঘটনা এত ছড়িয়ে গেছে যে, খেলার গুরুত্বপূর্ণ সময় আমাকে কেউ টিভির সামনে দাড়াতে দেয় না।
শুধু খেলা নয়, যে কোনাে বিষয়ে এ ধরনের বিপত্তি দেখা দেয়। যেদিন টেনে চড়ি সেদিন ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। যেদিন পথে বাসে যাই, রাস্তায় কয়েক কিলােমিটার দীর্ঘ জ্যাম লেগে যায়। বাজারে একদিন মরিচ। কিনতে গেলাম।
গিয়ে শুনি ওইদিনই কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকা। মােবাইলে ফেসবুক ইনস্টল করলাম। সে রাতেই বিশ্বজুড়ে ফেসবুকের সার্ভার ডাউন হয়ে গেল। এসব ঘটনা আশপাশের অনেকেই জেনে গেছে। তাদের একজন মামুন ভাই। মহল্লার বড় ভাই।
এক সন্ধ্যায় পথ আটকালেন তিনি। বললেন, “ছােট ভাই, তােমার একটা হেল্প লাগবে। কী হেল্প?’, জানতে চাইলাম। লজ্জায় মুখটা লাল করে।
বললেন, ‘আমি একটা মেয়েকে লাভ করি। ওর বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে অন্য জায়গায়। ‘এখন আপনার কী সমস্যা? বিয়েতে দাওয়াত দেয়নি?’ মামুন ভাই অবাক হয়ে আমাকে দেখলেন। তারপর বললেন, ‘ফাইজলামি। করছি বলে মনে হয়? বিষয়টা সিরিয়াস।
আমার গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে ভাঙানাের ব্যবস্থা। করাে।’ এটা কী ধরনের প্রস্তাব। ভাই, বলেন কি! সেটা কীভাবে সম্ভব?’ বললেন, ‘তুমি। | মেয়েটার বাসায় যাও। আজ ওকে পাত্রপক্ষ।
দেখতে আসবে। তুমি গেলে নিশ্চয়ই ওখানে | ভালাে কিছু হবে না। মানে, বিয়ে না হওয়ার
সম্ভবনা নব্বই শতাংশ বেড়ে যাবে।’ কথা | শুনে কিছুটা মন খারাপ হলেও বললাম, | মেয়েটা কে?’ তােমার প্রতিবেশী জরিনা।
“আচ্ছা, যাব।’ বলেই চলে এলাম। কি কপাল! রাতে জরিনাদের বাসায় যেতে হলাে। জরুরি খবর দিয়ে আমাকে নেওয়া হয়েছে। গিয়ে। দেখি বাসাভর্তি মেহমান। পাত্রপক্ষ জরিনাকে দেখতে এসেছে। টেবিলভর্তি খাবার। ভদ্রতা করে আপ্যায়নে অংশ নিতে বলা হলাে। ভদ্রতা রক্ষা করার জন্য এক কথায় টেবিলে বসে পড়লাম। কথাবার্তা শুনে যা বুঝলাম পাত্রপক্ষ জরিনাকে পছন্দ করেছে। কিন্তু জরিনা গড়িমসি করছে। আমাকে ডাকা। হয়েছে জরিনাকে একটু বুঝিয়ে বিয়েতে রাজি
করানাের জন্য। ও নাকি আমাকে খুব মানে। আমার সঙ্গে কথা বলে কি হলাে কে জানে, জরিনার মত বদলাল। গ্রিন সিগনাল পেয়ে। পাত্রপক্ষ হুট করে সিদ্ধান্ত নিল, আজ রাতেই | বিয়ে পড়ানাে হােক। এখনই কাজী ডেকে। নিয়ে আসতে হবে। কারও আর তর সইছে না। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে শাড়ি, আংটি কেনা হলাে। ফুল দিয়ে ঘর সাজানাে হলাে।
আমি কাজী নিয়ে হাজির। বিয়ে পড়ানাে। হলাে। জরিনার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আমার মামুন ভাইয়ের কথা মনে পড়ল। এতক্ষণ বিয়ের আয়ােজনে ব্যস্ততায় সব ভুলে গিয়েছিলাম। তখন মনে পড়লেই কি, আর না। পড়লেই কি। বাসায় ফিরে দিলাম ঘুম। পরদিন ভােরে ঘুম ভাঙল মামুন ভাইয়ের। | ডাকাডাকিতে। উঠে দেখি মামুন ভাইয়ের মুখ গম্ভীর। জরিনার তাে কাল রাতে বিয়ে হয়ে গেছে। ঘটনা কী বল তাে?’
মনে মনে বললাম ঘটনা আর কি, আমার সাপাের্টে আপনার কপাল পুড়ছে। মনের কথাটা না বলে, মুখে বললাম, ভাই, ঘটনা কিছুই না। হুট করে সব হয়ে গেল। মামুন ভাই বেশ।
উদাস হয়ে বসে আছেন। স্পষ্ট বুঝতে পারছি কেন তার মন খারাপ। বললাম, ভাই, মন খারাপ কইরেন না। বউভাত, বিয়ের সব প্রােগ্রাম কিছু হয় নাই। হবে সামনের সপ্তাহে। চট্টগ্রামের মেজবানের আয়ােজন থাকছে। আপনি যেন সবার আগে দাওয়াত পান সেই ব্যবস্থা করব। তবু মন খারাপ কইরেন না।’
মন্তব্য করুন